ফেসবুকে পরিচয়। এরপর প্রেম। একপর্যায়ে অভিভাবকের অমতে প্রেমিক শিপনকে বিয়ে করেন সুমাইয়া। পরিবারের লোকজনদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এমনকি শিপন যৌতুক হিসেবে ৮ লাখ টাকা দাবি করে সুমাইয়াকে নানাভাবে চাপ দিতো। এ নিয়ে রাগ করে রোজার ঈদে বাবার বাড়ি নালিতাবাড়ী চলে যায় সুমাইয়া। এরই মধ্যে শনিবার রাতে ৭ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন সুমাইয়া। ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের বিশগিরিপাড়া গ্রামে। রোববার (১৪ জুলাই) সকালে ওই গৃহবধূর মরদেহ ও একটি চিঠি উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় চারজনকে আসামি করে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছেন সুমাইয়ার বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক। আসামিরা হলেন- নিহতের স্বামী শিপন মিয়া, শ্বশুর, শাশুড়ি এবং ননদ। পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।’ স্থানীয়রা জানান, আট মাস আগে শেরপুর সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের সাপমারী এলাকার শিপন নামে এক যুবকের সঙ্গে ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সুমাইয়ার। একপর্যায়ে অভিভাবকের অমতে প্রেমিক শিপনকে বিয়ে করেন সুমাইয়া। বিয়ের আগে শিপন নিজেকে চাকরিজীবী হিসেবে পরিচয় দিলেও পরে সুমাইয়া জানতে পারেন তার স্বামী রাজমিস্ত্রির সহযোগী।
এদিকে, অভিভাবকদের অসম্মতিতে বিয়ে মেনে নিচ্ছিল না স্বামী শিপনের পরিবারও। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় প্রায়ই ঝগড়া হতো। এমনকি শিপন যৌতুক হিসেবে ৮ লাখ টাকা দাবি করে সুমাইয়াকে নানাভাবে চাপ দিতো। এ নিয়ে রাগ করে গত রোজার ঈদে সুমাইয়া তার বাবার বাড়ি নালিতাবাড়ী চলে আসার পর আর স্বামীর বাড়ি ফিরে যাননি। শনিবার রাতে সুমাইয়া মনের ক্ষোভে ৭ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখে শয়নকক্ষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া বিরাজ করছে। চিঠিতে সুমাইয়া লেখেন, ‘বিয়ের গোসলটাও পেলাম না। শেষ গোসলটাও পাব না। জানাজাও পাব না। আমার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। অনেক ভালোবাসি তোমাকে শিপন। কিন্তু তুমি শেষ পর্যন্ত তোমার সঙ্গে থাকতে দিলা না।’
তিনি আরো লেখেন, ‘আমি চাইলে দ্বিতীয় বিয়ে করে জীবনটা ভালোভাবে চালাতে পারতাম। কিন্তু আমি চাই না দ্বিতীয় কেউ আমার শরীর স্পর্শ করুক।’ বাবা মাকে উদ্দেশ করে সুমাইয়া লেখেন, ‘তোমরা মনে কষ্ট নিওনা না। শিপনকে সুখে রাখার জন্য আমি চলে যাচ্ছি। আমার মুখ তাকে দেখতে দিওনা না। আমার শরীরটা কাটতে দিওনা না। আমি কষ্ট পাব।’
নালিতাবাড়ী থানার ওসি মনিরুল আলম ভুঁইয়া বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে সুমাইয়ার বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।