কোটা বিরোধী আন্দোলন, রিমান্ডে বিচারপতির ছেলে, ৩ মামলায় আসামি

 সারাদেশ: কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় বিটিভি ভবনে হামলার মামলায় আসামি হয়ে রিমান্ডে গেলেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামানের ছেলে মাহমুদুস সালেহিন। রামপুরা থানা মামলা নং-১৯ (০৭) ২৪। ওই মামলায় গত ২১শে জুলাই সালেহিনের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। ২৬শে জুলাই রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরোবিয়া খানম।

১৯শে জুলাই বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এ ছাড়াও মাহমুদুস সালেহিনের নামে মারধর, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, কটটেল নিক্ষেপের অভিযোগে রাজধানীর হাতিরঝিল ও কাফরুল থানায় আরও পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। হাতিরঝিল থানা মামলা নং-২২ (০৭) ২৪। কাফরুল থানা মামলা নং-২৩ (০৭) ২৪। সালেহিনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা ৩টি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিনটি মামলাই এজহারভুক্ত আসামি ও অভিযোগের ধরন একই। ঘটনাস্থল ভিন্ন।

তবে আসামির সংখ্যা একই। থানা পৃথক পৃথক। প্রতিটি এজহারে শুধুমাত্র আসামিদের ক্রমিক নং অদল-বদল করা হয়েছে। এক মামলায় কাউকে আগে আনা হয়েছে। আবার আরেক মামলায় কাউকে পেছনে নেয়া হয়েছে। ৩টি মামলায় ধারা ও অভিযোগ অনুরূপ রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯শে জুলাইয়ের পরে বিএনপি নেতা আমিনুল হকের বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে, সব মামলায় মাহমুদুস সালেহিনকে আসামি করা হয়। মামলার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট জয়নুল আবেদীন মেসবাহ মানবজমিনকে বলেন, আসামি মাহমুদুস সালেহিন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামানের ছেলে। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। এই ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গেও তার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি নিরেট একজন ভদ্রলোক। তারপরেও কেন তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে, তা আমার বোধগম্য নয়। সালেহিনকে প্রথমে রামপুরা থানায় একটি মামলায় গ্রেপ্তার করে রিমান্ড চাওয়া হয়। সেখান থেকে পরে কাফরুল থানার আরও একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই মামলায়ও রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। বলতে গেলে মামলার পর মামলা হচ্ছে। একজন বিচারপতির ছেলেও যদি এ ধরনের হয়রানির শিকার হয়, তখন আর বলার কিছু থাকে না। তাহলে সাধারণ মানুষের কী হচ্ছে, একবার ভেবে দেখুন।

মামলার এজহারে বলা হয়েছে, গত ১৮ই জুলাই সকাল সাড়ে ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন লেখা সম্বলিত ব্যানার নিয়ে ডিআইটি রোডগামী রামপুরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও বিটিভি ভবনের সামনের রাস্তায় অবস্থান করে। একপর্যায়ে পুলিশ তাদেরকে বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এরপরেই বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশে ও সক্রিয় অংশগ্রহণে অজ্ঞাতনামা ৩০০০ থেকে ৪০০০ জন নেতাকর্মী বেআইনিভাবে দলবদ্ধ হয়ে সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় পুলিশ ও আনসারের বাধা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে বিটিভি ভবনের প্রধান ৪টি গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ভবনের ভেতর ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু করে। টেলিভিশন ভবনে কর্মরত বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নাম ও পদবি উল্লেখ করে খোঁজাখুঁজি করে প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন করে। একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য পরিকল্পিতভাবে অন্তর্ঘাতমূলক সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে ‘ক’ শ্রেণীর কেপিআইভুক্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনের ভেতরে থাকা বিপুল পরিমাণ মহামূল্যবান সরকারি মালামাল ভাঙচুর ও ক্ষতিসাধন করে।

ক্ষতির পরিমাণ অনুমানিক ৫০ কোটি টাকা। একপর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা রাত ৯টার সময় বিটিভির সামনে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের অজ্ঞাতনামা ৩০০০ থেকে ৪০০০ জন কর্মী বেআইনি জনতায় দলবদ্ধ হয়ে লুটপাট, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস ও হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠিসোটা ও মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবৈধভাবে বিটিভির ভেতরে প্রবেশ করে আক্রমণ করে ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপসহ বিপুলসংখ্যক মালামাল ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধনসহ অগ্নিসংযোগ করে। বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, জামায়াত ও বিএনপি’র কতিপয় শীর্ষ পর্যায়ের ১। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (৭০), ২। সুলতান সালাউদ্দিন টুকু (৫৪), ৩। নিপুণ রায় চৌধুরী (৩৮), ৪। এমএ সালাম (৫৬), ৫। কাজী সায়েদুল আলম বাবুল (৬২), ৬। মিয়া গোলাম পরোয়ার (৬৬), ৭। মো. আমিনুল হক (৪৭), ৮। মো. মাহমুদুস সালেহিন (৩৭)সহ আরও শীর্ষ নেতাদের পরিকল্পনা, প্ররোচনা ও অর্থ জোগানের মাধ্যমে এই ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। গত ১৮ তারিখ রাত ১২টা থেকে ১৯ তারিখ দুপুর ১২টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিটিভি ভবনের আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে আসে। ভবনের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে ককটেল, পেট্রোল বোমাসহ অবিস্ফোরিত বিস্ফোরক জাতীয় দাহ্যপদার্থ, প্রচুর ধোঁয়া, প্রচণ্ড তাপ এবং বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত রুমগুলোতে প্রবেশ করে ওইদিন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন শাখার সম্পদসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির হিসাব (অসম্পূর্ণ) ও ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলোর হিসাব করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কিছুটা বিলম্বে থানায় এসে এজাহার দায়ের করলাম। অতএব, উল্লেখিত বিষয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মর্জি হয়। মামলাটি পেনাল কোডের ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/১৮৬/৩৫৩/৩৮৪/৪৩৬/৩০৭/১০৯/১১৪/৫০৬সহ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) ধারায় করা হয়।

সূএ: Daily Manab Zamin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *