চবিতে ‘চাইলাম অধিকার, হইলাম রাজাকার’ স্লোগান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মতো মধ্যরাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও (চবি) বিক্ষোভ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। রোববার (১৪ জুলাই) রাত ১১ টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় বিক্ষোভ নিয়ে জড়ো হতে থাকেন তারা। ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের সমাগম বাড়তে থাকে। এ সময় ‘চাইলাম অধিকার, হইলাম রাজাকার’, ‘তুমি কে, আমি কে-রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান শোনা যায়৷

এদিকে রাত ১১টার পর হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে রাত সোয়া ১১টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসি প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, ছাত্ররা হল থেকে বেরিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করছেন। রোকেয়া হলের তালা ভেঙে ছাত্রীরা রাজু ভাস্কর্যে ছুটে আসেন। তাদের হাতে চামচ-বাটি দেখা যায়। সেগুলো বাজিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন তারা। ‘ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘তুমি কে আমি কে-রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে মুখোরিত পুরো ক্যম্পাস।

কোটা সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল, বাংলা ব্লকেডসহ নানা রকম কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন করে আসছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। সবশেষ রোববার দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে গণপদযাত্রা শুরু করে শাহবাগ-মৎস্যভবন হাইকোর্ট মোড় হয়ে গুলিস্তান জিপিওর সামনে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর তারা বেরিক্যাড ভেঙে গুলিস্তান পাতাল মার্কেট সংলগ্ন মোড়ে আবারও বাধার মুখে পড়েন।

পরে দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, আসিফ মাহমুদসহ ১২ জনের একটি প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতির কাছে যান। স্মারকলিপি দেয়ার পর আন্দোলনকারীরা সচিবালয় হয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে যার যার মতো ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেন।

আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তখন সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল ৩০ শতাংশ। এছাড়া ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা ছিল। সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ। কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর রুল দেন হাইকোর্ট। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।

পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালতে হয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে ৪ জুলাই। রিট আবেদনকারীপক্ষ সময় চেয়ে আরজি জানালে সেদিন আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে গত মঙ্গলবার আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থী। দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য বুধবার (১০ জুলাই) আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কিছু পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেয়া হয়। এই স্থিতাবস্থা চার সপ্তাহের জন্য উল্লেখ করে আপিল বিভাগ আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। তবে আদালতের আদেশ মানবেন না বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা অপেক্ষা করছেন নির্বাহী আদেশের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *