জিল্লুলকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় কর্মকর্তা বানানোর স্বপ্ন ছিল বাবার

সন্তানকে হারিয়েছেন ১২ দিন হয়েছে। কলিজার টুকরোকে হারানোর ব্যথা এখনো ভুলতে পারেননি মো. জিল্লুল শেখের মা-বাবা ও আত্মীয় স্বজন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিতে নিহত ঢাকা ইমপেরিয়াল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মো. জিল্লুল শেখ। এখনো আহাজারি চলছে পরিবারে। মা-বাবা, দাদি, ভাই-বোন আর আত্মীয় স্বজন ও এলাকাবাসীর কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। নিহত ঢাকা ইমপেরিয়াল কলেজের একাদশ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র মো. জিল্লুল শেখের গ্রামের বাড়ী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠি গ্রামে।

ওই দিন ১৮ জুলাই রাতেই জিল্লুলের লাশ নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠি গ্রামে। নিহত শিক্ষার্থীর মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। পরদিন ১৯ জুলাই সকালে কাঠি গ্রামের পঞ্চপল্লি ঈদগাহে নিহতের নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ওই গ্রামের সাধারণ মানুষ অংশ নেন। পরে কাঠি কবরস্থানে দাফন করা হয়। এমন হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী।

নিহত শিক্ষার্থীর বাবা মো. হাসান শেখ বলেন, সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ২০ বছর আগে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানের মেরুল বাড্ডা এলাকার আড়তে শুরু করেন মাছের ব্যবসা। এর মধ্যে সংসারে আসে ৪ সন্তান। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদেরকে ভর্তি করেন ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ইচ্ছা আর স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া শিখিয়ে বড় কর্মকর্তা বানাবেন। কিন্তু তার সেই ইচ্ছা আর স্বপ্নে বড় ধাক্কা লাগে ১৮ জুলাই।

তিনি বলেন, ওই দিন শুক্রবার মসজিদে নামাজ পড়তে যায় ছেলে মো. জিল্লুল শেখ। নামাজ পড়া শেষে তার মোবাইলে বন্ধুদের ম্যাসেজ আসে। এরপরই বন্ধুদের সঙ্গে আফতাব নগরে ইষ্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সমানে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেয় জিল্লুল শেখ। এরপর জানতে পারেন তার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে পান ছেলের রক্তাক্ত মরদেহ। বুকসহ শরীরের সামনের অংশ গুলিতে ছিল ঝাঁজরা। ছেলের মৃত্যুর খবরে শোকে পাথর হয়ে আছে মা।

তিনি আরও বলেন, আমার তিন চাচা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। তখন আমার বাবা তিন মুক্তিযুদ্ধা চাচার পরিবার চালিয়েছেন। তাহলে কি আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মধ্যে পরি না? বিচার চান কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কার কাছে বিচার চাবো? কে আমাকে বিচার দিবে? আমি তো আর আমার সন্তানকে কখনোই ফিরে পাবো না। নিহতের ফুফু শিউলী বেগম বলেন, আমার ভাইপো তো কোনো অন্যায় করেনি। সে যৌক্তিক আন্দোলন করেছিল। সে তো কোনো রাজনীতি করে না, তাহলে কেন তাকে এভাবে হত্যা করা হলো। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

সূএ: Channel 24

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *