বন্ধুর ফোনে রেখেছিলেন প্রেমিকার ছবি-ভিডিও, ফেরত না দেওয়ায় খুন

প্রেমিকার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও রেখেছিলেন বন্ধুর মোবাইলে। পরে চেয়েও ফেরত না পাওয়ায় বন্ধু মামুনকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। এক লাখ টাকায় ‘কিলার’ ভাড়া করে হত্যার মিশন বাস্তবায়ন করা হয়। হত্যার পর রেললাইনের পাশে ফেলে রাখা হয় মামুনের মরদেহ।

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাবের কাছে অভিযুক্ত বন্ধু শাহেদ এমনটিই জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন।

নিহত মামুনের ব্যবসায়িক পার্টনার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু শাহেদ হোসেনকে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাতে শহরতলীর লিংকরোড এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে ব্যাটালিয়ন কার‍্যালয়ে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানায় র‍্যাব।

গ্রেফতার শাহেদ হোসেন (৩০) ঈদগাঁও উপজেলার মাছুয়াখালী সিকদার পাড়ার মতিউর রহমানের ছেলে। তবে তিনি কক্সবাজার পৌরসভার ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকায় বাস করেন।

নিহত আব্দুল্লাহ আল-মামুন (৩০) কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া ঘাটপাড়ার মৃত নবী হোসেনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ইলেক্ট্রনিকস পণ্য ব্যবসায়ী ছিলেন। লিংক রোড এলাকায় যৌথভাবে পরিচালিত একটি শোরুম রয়েছে। শোরুমটি মামুন তার বন্ধু শাহেদ ও শাহেদের ভগ্নিপতি জসিম উদ্দিনের শেয়ারের ভিত্তিতে পরিচালনা করে আসছিলেন।

র‍্যাব জানায়, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার একটি মেয়ের সঙ্গে শাহেদ হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক চলাকালে তারা কিছু আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। পরে সম্পর্কের অবনতি হলে শাহেদের মোবাইলে থাকা তাদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওগুলো ডিলিট করতে বলেন প্রেমিকা। নিজের মোবাইলে ডিলিট করার আগে শাহেদ ছবি ও ভিডিওগুলো বন্ধু মামুনের মোবাইলে সংরক্ষণ করতে পাঠিয়ে দেন। পরে প্রেমিকার সামনে শাহেদ তার মোবাইল থেকে ছবি ও ভিডিওগুলো ডিলিট করেন। পরবর্তী সময়ে ছবি ও ভিডিওগুলো বন্ধু মামুনের কাছ থেকে ফেরত চান শাহেদ। কিন্তু এসব ছবি ও ভিডিও শাহেদকে দিতে অস্বীকার করেন মামুন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মামুনকে হত্যার ছক আঁকেন শাহেদ।

পরিকল্পনা অনুযায়ী শনিবার (৬ জুলাই) রাত ৮টার দিকে মামুনকে হোয়াটসঅ্যাপে কল করে বাহারছড়া বাজারে আসতে বলেন। শাহেদের কথায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে মামুন বাহারছড়া বাজারে পৌঁছালে দুজনেই মোটরসাইকেলযোগে রওয়ানা দেন। ঈদগাঁও কালিরছড়া বাজারের একটু আগে পৌঁছালে শাহেদ বন্ধু মামুনকে মোটরসাইকেল থামাতে বলেন।

মোটরসাইকেল থামানোর পরপরই ঈদগাঁওয়ের শীর্ষ ডাকাত মাছুয়াখালীর আলী আহমদ ওরফে চুনতি মৌলভীর ছেলে শাহীন ওরফে লালুর নেতৃত্বে কয়েকজন দুর্বৃত্ত মামুনের মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়ে শাহেদকে দেন। এসময় তাদের এক লাখ টাকা দেন শাহেদ। পরে মোবাইলটি ভেঙে চুরমার করে ডোবায় ফেলে দেন। এরপর শাহেদের নির্দেশে ডাকাত শাহীনের নেতৃত্বে হাত-পা বেঁধে মামুনের ওপর নির‍্যাতন চালানো হয়। পরে হত্যা করে রেললাইনের পাশে ফেলে রেখে যান। পরের দিন সকালে রামু রশিদ নগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের খাদেমের পাড়া এলাকার রেললাইনের পাশে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মামুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

র‍্যাব কর্মকর্তা সাজ্জাদ জানান, এ ঘটনায় নিহতের ভাই মোহাম্মদ পারভেজ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার শাহেদকে রামু থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *